মায়ের মুখ থেকে শেখা বুলি মায়ের মতই আমাদের কাছে আদরের ও গৌরবের। এই বুলিই আমাদের মাতৃভাষা। এই ভাষাই একটি শিশুর জীবনকে গড়ে তোলে ও তার সার্বিক বিকাশে সহায়তা করে।
কিন্তু মাতৃভাষার সাথে আমাদের সম্পর্কের শুরুটা তারও আগে।
গবেষণায় দেখা গেছে, নবজাতকরা গর্ভাবস্থায়ই মাতৃভাষার বিভিন্ন ধ্বনি শুনে থাকে। অর্থাৎ একটি শিশু মাতৃভাষার পরিচিতি নিয়েই জন্মগ্রহণ করে। একে বলা হয় প্রাক-ভাষিক স্তর। এটি শিশুর ভাষা বিকাশের অন্যতম প্রধান স্তর। এবং এই স্তরের প্রথম ধাপ হচ্ছে শ্রবণ দক্ষতার সূচনা। শিশুদের সেই দক্ষতা এতই প্রবল যে মাত্র ছয় মাস বয়সেই সে মাতৃভাষার শব্দের সাথে অন্য ভাষার শব্দের পার্থক্যও বুঝতে পারে।
শিশুর মস্তিষ্ক চারপাশ থেকে নিরবচ্ছিন্ন ভাবে তথ্য সংগ্রহ করতে থাকে। এগুলোর নিবিড় বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে শিশুর জ্ঞানার্জন প্রক্রিয়া চলমান থাকে।
ভাষা প্রকাশের শুরুটা কান্নার মাধ্যমে হলেও চার মাস বয়স থেকে শিশু তার স্বরযন্ত্রকে নিয়ন্ত্রণ চেষ্টা করে। আশপাশের সব শব্দ গুলো শুনে আধো-আধো করে বলতে চায়। এর পরের স্তরে শিশু স্বরযন্ত্রের দ্বারা শব্দের তারতম্য তৈরি করতে শিখে।
সাত থেকে আট মাসের শিশুরা দে-দে, নে-নে, বা-বা ইত্যাদি সিলেবলগুলি বলতে শুরু করে। এক বছর বয়সে বিভিন্ন শব্দাংশ একত্র করে প্রকাশ করে। এর মাধ্যমে শিশু ভাষা গ্রহনের পাশাপাশি ভাষা উৎপাদনের ক্ষমতা লাভ করে। একে এক-শাব্দিক পর্যায় বলা হয়। এই পর্যায়ের শেষের দিকে বাচ্চারা হ্যাঁ – না, বোধক শব্দ গুলো ব্যবহার করতে শুরু করে।
প্রাক-ভাষিক স্তরের স্থায়ীত্ব শিশুর জন্মের ১৪-১৫ মাস পর্যন্ত। আর ভাষিক স্তরের সুচনা হয় সাধারণত ১৬-১৭ মাস থেকে। যেখানে সে অর্জন করতে শুরু করে কথন দক্ষতা। এসময়ে একের পর এক শব্দ সাজিয়ে সে মনের ভাব প্রকাশ করতে শিখে। এরপর বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে শিশু মাতৃভাষার প্রয়োজনীয় নিয়মকানুন গুলো রপ্ত করতে থাকে।
“এটা কী”, “ওটা কী”, এই ধরনের ভাব প্রকাশের মাধ্যমে শিশুরা দ্বি-শাব্দিক পর্যায়ে প্রবেশ করে। দেড় বছর বয়স থেকে তারা প্রতি দুই ঘন্টায় একটি করে শব্দ শিখতে শুরু করে এবং ১৮ মাস বয়সের মধ্যে তারা ছোটছোট বাক্য গঠন করে ফেলে। যদিও এসব বাক্যে ব্যাকরণ, অব্যয়ের ব্যবহার থাকেনা।
দুই বছর থেকে তারা অতি দ্রুত ব্যাকরণের ব্যবহার করতে শুরু করে। এমনকি তিন বছর মধ্যে তারা নতুন নতুন শব্দ ও ব্যাকরণ প্রয়োগ করতে শিখে ফেলে। এভাবেই সে ভাষা উন্নয়নের ধাপ গুলো পেরোতে থাকে। মাতৃভাষার সকল কলা কৌশল তাদের মনে গেঁথে যায়।
ধীরে ধীরে মাতৃভাষার ছোঁয়ায় একটি শিশুর চিন্তা চেতনার জগত সজীব হয়ে ওঠে। পারিবারিক ও সামাজিক পরিবেশে ঘটে মাতৃভাষার পূর্ণ বিকাশ। এটি শিশুর জীবনে একটি চিরন্তন ও চলমান ধারা। যার সূচনা গর্ভাবস্থায় আর এর সমৃদ্ধি ঘটতে থাকে পুরো জীবনব্যাপী। মাতৃভাষা হয়ে যায় তার অস্তিত্বের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

বাবাই কেয়ার আপনাকে স্বাগতম। বাবাই এখন আর শুধু শপিংয়ের জন্য নয়। বাবাই কেয়ার আপনাকে পরিকল্পনা থেকে শুরু করে গর্ভাবস্থার প্রতিটি ধাপে এবং পেরেন্টিংয়ের সহায়তা করবে।