বায়ান্নর ভাষা শহীদদের বাঙালী জাতি সগৌরবে স্বরণ করলেও কালের আবর্তনে হারিয়ে গেছে স্বীকৃতি না পাওয়া আরো অনেক ভাষা শহীদ ও তাদের গল্প গুলি। যার মধ্যে ছিলো মাত্র ৯ বছর বয়সী শিশু শহীদ অহিউল্লাহ। তখন সবেমাত্র তৃতীয় শ্রেণীতে উঠেছে। পিতা হাবিবুর রহমান দরিদ্র রাজমিস্ত্রী। শত অভাব অনটনের মধ্যেও সন্তানকে সুশিক্ষিত করার স্বপ্নে পাঠিয়েছিলেন স্কুলে। গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন সমাজের একজন প্রকৃত মানুষ হিসেবে। এদিকে শিশু অহিউল্লাহ ছিলো প্রচন্ড দুরন্ত স্বভাবের। সারাদিন ঢাকার অলিতে গলিতে ঘুরেঘুরে ছবি আঁকতে পছন্দ করতো সে।
২২শে ফেব্রুয়ারী, ১৯৫২।
ভাষার দাবীতে আগের দিন কারফিউ ভঙ্গ ও হতাহতের ঘটনায় পুরো শহরে থমথমে নিরবতা। পুরান ঢাকার নবাবপুর রোডে চলছে মিলিটারিদের টহল। এলাকাবাসীর মাঝে অজানা আতঙ্ক। প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া কেউ বের হচ্ছেনা বাসা থেকে।
কিন্তু সদাচঞ্চল অহিউল্লাহ বেড়িয়েছিলো কাগজ-পেন্সিল নিয়ে। দাঁড়িয়ে ছিলো এলাকার খোশমহল রেস্টুরেন্টের সামনে। তখনই পাকিস্তানী সেনাদের একটি গাড়ি এসে দাঁড়ায়। জলপাই রঙের পোষাক পরা এমন সশস্ত্র লোকদের সে আগে কখনও দেখেনি। কৌতুহলী হয়ে শিশু অহিউল্লাহ পকেট থেকে একটি সাদা কাগজ বের করে তাদের ছবি আঁকতে শুরু করে।
এদিকে পাকিস্তানি সেনাদের গুলিতে নিহত রফিক, জব্বার, বরকত, সালামদের স্মরণে শোক মিছিল বের করে এলাকার ছাত্ররা। সেই মিছিলের স্লোগানে নবাবপুরের আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। পাকিস্তানি সেনারাও মিছিল প্রতিরোধের প্রস্তুতি নেয়। ছোট্ট অহি জানেনা কিসের মিছিল কিন্তু কৌতুহল নিয়ে দেখতে থাকে এই জনতার ঢল । হাতে থাকা অসম্পূর্ণ ছবির কাগজটি মুখে গুজে চিবুতে থাকে সে।
কিছুদূর এগোনো মাত্রই পাকিস্তানি মিলিটারি গুলি ছুড়তে শুরু করে মিছিলের দিকে। নিহত হয় আরো কিছু নিরীহ মানুষ, আহত হয় আরো অনেকে। এর মধ্যেই ঘাতকের একটি বুলেট এসে লাগে ছোট্ট অহির কপালে। সাথেসাথেই মাটিতে লুটিয়ে পরে সে। রক্তে রঞ্জিত হয় চারপাশ।
পাকিস্তানী সেনাবাহিনী লাশ গুলো গুম করে ফেলার চেষ্টা করে। নিয়ে যায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে শিশুর পরিচয় নিশ্চিত করার চেষ্টা চালানো হয়। লাশটির প্রত্যক্ষদর্শী ডা. মেজর (অব.) মাহফুজ হাসান লাশের বুক পকেটে ফুল পাখি, প্রজাপতি আঁকা কিছু কাগজ ও পেন্সিল পান।
প্রথমে শিশুর নাম জানতে পারেন শফিউল্লাহ। কিন্তু পরবর্তীতে জানা যায় যে শিশুটির নাম অহিউল্লাহ। পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর বাবা হাবিবুর রহমান ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এসে লাশ শনাক্ত করেন। কিন্তু পুত্রের লাশ তাকে নিয়ে যেতে দেওয়া হয়নি। পরিবারের কাছে হস্তান্তর না করেই পাকিস্তানি সেনারা রাতের আধারে অহিউল্লাহর লাশটি আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করে।
পরদিন ২৩ ফেব্রুয়ারি দৈনিক আজাদে তার মৃত্যুর খবরটি ছাপানো হয়। এছাড়াও ১৯৫৪ সালে ভাষা আন্দোলনের মুখপত্র ‘সৈনিক’ নামের একটি পত্রিকায় ভাষা শহীদদের তালিকায় অহিউল্লাহর নাম ছিলো। তবুও ইতিহাসের পাতা থেকে হারিয়ে যায় এই শিশু শহীদ। রফিক, জব্বার, সালাম, বরকত ভাষা শহীদের স্বীকৃতি ও মর্যাদা পেলেও সময়ের সাথে সাথে হারিয়ে যায় অহিউল্লাহর নামটি।

বাবাই কেয়ার আপনাকে স্বাগতম। বাবাই এখন আর শুধু শপিংয়ের জন্য নয়। বাবাই কেয়ার আপনাকে পরিকল্পনা থেকে শুরু করে গর্ভাবস্থার প্রতিটি ধাপে এবং পেরেন্টিংয়ের সহায়তা করবে।